Wednesday, May 7, 2014

৪ ধারায় বিভক্ত হেফাজত!

Wed, 07 May, 2014 ===>> Natun Barta  নিয়াজ মাখদুম // নতুন বার্তা ডটকম

চার ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে কওমি মাদরাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরী। সোমবার সংগঠনটির শাপলা চত্বর ট্রাজেডির এক বছর পার হয়েছে। কিন্তু এ দিনটিতে চারটি গ্রুপ আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করেছে। ছিল না কারো সঙ্গে কোনো সমন্বয়।


এ বিষয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তাদের অনৈক্য ও সমন্বহীনতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পাওয়া যায় বিভিন্ন তথ্য। ক্ষোভ রয়েছে মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা রহী ও জুনায়েদ আল হাবীবকে নিয়ে। অনেকেই ধারণা করছেন, নেতৃত্ব নিয়েই হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর কমিটিতে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে; যা আস্তে আস্তে আরো প্রকট হবে।

জানা গেছে, নেতৃত্বের দ্বন্দ্বই ঢাকা মহানগরী হেফাজতের মূল সমস্যা। ফলে হেফাজত সংশ্লিষ্ট ইসলামি দলগুলো কয়েকটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। হেফাজতের পক্ষ থেকে বারিধারা মাদরাসায় একটি দোয়া মাহফিল করা হয়। সেখানে ইসলামী ঐক্যজোট (লালবাগ), খেলাফত আন্দোলন (কামরাঙ্গীর চর) ও খেলাফত মজলিসের (পল্টন) কেউ অংশ নেননি। আবার কামরাঙ্গীর চর মাদরাসার কর্মসূচিতেও যায়নি বারিধারা লালবাগখেলাফত মজলিসের কোনো নেতা। আবার লালবাগেও আসেননি বারিধারার কেউ। এছাড়া জামেয়া রাহমানিয়ায় আয়োজিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কর্মসূচিতেও যোগ দেননি বাইরের কেউ। রাজধানীর এই প্রভাব দেশের অন্যান্য এলাকাতেও এমনকি কেন্দ্রেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারাও আছেন বেকায়দায়।

হেফাজতে ইসলামের একটি সূত্র জানায়,  ঢাকা মহানগরের হেফজতে ইসলামের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় মাদানিয়া আরাবিয়া বারিধারা মাদরাসা থেকে। এখানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী। আরেকটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছে মুফতী আমিনীর লালবাগ মাদরাসা। এখানের নেতৃত্ব দেয় আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোট। আরেকটি অংশ রয়েছে কামরাঙ্গীর চর মাদরাসা। এ অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছে হাফেজ্জী হুজুরের দল খেলাফত আন্দোলন। শায়খুল হাদিসের খেলাফত মজলিসও নিজেদেরকে হেফাজতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করছে। এই চার গ্রুপের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নেই যোগাযোগ, নেই কোনো সমন্বয়।

সূত্র মতে, ঢাকা মহানগর হেফাজতের আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাসেমী ১৯ দলীয় জোটভুক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির। ইসলামী ঐক্যজোট নেতা জুনায়েদ আল হাবিব এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফীসহ দল দুটির বেশ কয়েকজন নেতা সম্প্রতি জমিয়তে উলামায়ে যোগ দিয়েছেন। ঢাকায় হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ এই দলের অধীনে চলে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। এ কারণেই মূলত হেফাজত নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে বলেও দাবি করেছেন অনেকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, “একবছর হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়নি। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। নেই কেন্দ্রীয় একটি শক্ত কমিটি। যেখানে সিদ্ধান্ত নিতে হলে মজলিসে শূরার মাধ্যমে নিতে হবে। সংগঠনের মধ্যে আমিত্ব এলে সে সংগঠন আর টিকে না। এখন যে অবস্থা একটা পর্যায়ে হেফাজতে ইসলামের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, “গত ৫ মে’র প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপট এক নয়। এখন শাহবাগ নেই যে সাধারণ মানুষ তাদের বিরোধিতা করার জন্য ডাক দিলে নেমে আসবেন। এখন আর আসবেন না।”

ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বারিধারায় অনুষ্ঠান হয়েছে। যার যার রাজনৈতিক দল থেকে এ দিনটি স্মরণ করার কারণে এ অনুষ্ঠানে অনেকেই আসতে পারেননি। তাছাড়া একটা সমস্যা তো সৃষ্টি হয়েছে, যা আপনারা বুঝতেই পারছেন।”

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব ও খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব জাফরুল্লাহ খান বলেন, “রাজনৈতিকভাবে সবাই আলাদা। কিন্তু হেফাজতের বেলায় সবাই এক। আমার মনে আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই।”

তিনি বলেন, “আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলাম চলছে। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে এতদিন সংগঠন চললে একটু আধটু সমস্যাতো হয়ই। এই কমিটিকে এখন পূর্ণাঙ্গ করা উচিত।”

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা হয়নি। এখন যে যেভাবে পারছে কাজ করছে। ইস্যু তৈরি হলে আবার সবাই এক হয়ে কাজ শুরু করবেন।”

No comments:

Post a Comment