Friday, February 14, 2014

বসনিয়া মুসলিম গণহত্যা

বসনিয়া মুসলিম গণহত্যা 

১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়ার যুদ্ধে প্রায় দুই লাখ বসনিয় মুসলিম নিহত ও প্রায় বিশ লাখ শরণার্থী হয়েছে। এছাড়া ৬০,০০০ মুসলিম মহিলা সম্ভ্রমহরণের শিকার হয়েছেন (নাউযুবিল্লাহ)।

১ম বিশ্বযুদ্ধ
১৯১২-১৩ সালে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এ অঞ্চলে ১৩০০০ মুসলমানকে জোরপূর্বক খ্রিস্টান হতে বাধ্য করা হয় পরে অবশ্য তারা আবার ইসলামে ফিরে আসে। ১৯১৪ সালে বসনিয়ার এক গ্রামে জঘণ্যতম হত্যাকান্ড- সংঘটিত হলে এক রাত্রেই ৬০০ শিশু ও মহিলা হত্যা করা হয়।

২য় বিশ্বযুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বসনিয়ায় ১ লাখ ২০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ১৯৪৪-৪৫ সালে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়, সেটা ছিল বসনিয়ার ২৫০ বছরের ইতিহাসে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে পরিকল্পিত ঘটনা। বহু নারীর মুখের চামড়া উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো। মুসলমান নারীরা যে পর্দা করতো তাকে ব্যাঙ্গ করে এ কাজটি করা হয়েছিলো। নারী ও শিশুদের দ্রিনা নদীতে হত্যা করে মুসলমানদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে তোমাদের পালাবার পথ নেই।

মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ বসনিয়ার ৬টি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাকে নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এগুলো হচ্ছে পূর্ব বসনিয়ার স্রেবরেনিসা, জেপা ও গোরাজদে, উত্তরের তুজলা, উত্তর পশ্চিমের বিহাচ ও রাজধানী সারায়েভো। জাতিসংঘ এলাকাটির নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছিল। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষীদের মোতায়েন করা হয়েছিল ওই শহরে। সেখানে মোতায়েন জাতিসংঘের সেনারা ছিল হল্যান্ডের নাগরিক। ফলে ১৯৯২-১৯৯৫ সালের মধ্যে বসনিয় গৃহযুদ্ধের সময় সেব্রেনিৎসা শহরটি "নিরাপদ অঞ্চল" হিসেবে ঘোষিত হওয়ায় লাখ লাখ বসনিয় মুসলমান জীবন রক্ষার জন্য ওই শহরে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই বসনীয় সার্ব সেনাবাহিনী জাতিসংঘের নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে ফেলে। আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সার্বরা তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জাতিসংঘ ঘোষিত নিরাপদ এলাকা স্রেবরেনিসায় মাত্র পাঁচ দিনেই হত্যা করা হয় প্রায় আট হাজার মানুষকে। নিহত ও গৃহহীনদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান।

গণহত্যার নির্মমতা
সার্ববাহিনী জাতিসংঘের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্রেবরেনিসা দখল করে নেয় বৃষ্টির মতো মর্টার বর্ষণ করে। ৪০ হাজার মুসলিম আদিবাসীকে উৎখাত করা হয় স্রেবরেনিসা থেকে এবং আট হাজার মুসলমানকে জবাই করা হয় পশুর মতো। হত্যার পর তড়িঘড়ি করে মৃতদের গণকবর দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা গোপন করতে পরে গণকবর থেকে মৃতদেহগুলো তুলে আলাদা ৭০টি স্থানে পুঁতে ফেলে সার্ব সেনারা। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করে ৩,৭৪৯ জনকে আগেই পোটোচারি কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। বিশেষ অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে নতুন ৭৭৫টি দেহাবশেষগুলোকে তাদের সঙ্গী করা হলো। ২০ জুলাই সার্ব দস্যুরা জাতিসংঘ শান্তিবাহিনীর নাকের ডগায় অপর নিরাপদ অঞ্চল জেপা দখল করে নেয়। এবার গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত করে দেয় ৫০ হাজার মুসলিম-অধ্যুষিত গোরাজদে শহর। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত চলা বসনিয়া সংঘাতে প্রায় দুই লাখ মানুষ নিহত হয়। গৃহহারা হয় ৪০ লাখ মানুষ। ১৫,২০০ মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের পরিবার এখনো তাদের সন্তান ও স্বজনদের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছেন। খ্রিস্টান ইউরোপের সমর্থনপুষ্ট সার্বীয় বাহিনী তিন বছর যাবৎ বসনিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখে। বসনিয়ার তিন চতুর্থাংশ এলাকা দখল করে নেয় সার্বরা। ক্রুসেডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ইতিহাসের এ-বর্বরতম পৈশাচিকতায় সার্বীয় আগ্রাসী বাহিনী জাতিসংঘের ত্রাণবাহী কনভয়কে ছিটমহলে প্রবেশ করতে দেয় নি। রাজধানী সারায়েভো অসংখ্য মসজিদে ভরা। এজন্য সারায়েভোকে মিনারের শহর (The City of Minerates) নামে অভিহিত করা হয়। প্রতি মিনিটে নিক্ষিপ্ত মর্টার ও কামানের গোলার বিস্ফোরণে আযানের শব্দ ধ্বনিত হয় নি বহুদিন, সারায়াভোর মসজিদে ১৮ মাস নামাযের জামায়াত হতে পারে নি। ইগম্যান পার্বত্য এলাকার পরিবেশ এখনো স্বজন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটা ছিল ইউরোপের সর্ববৃহৎ নারকীয় ও নৃশংস গণহত্যা। সে সময় স্রেবরেনিসার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ডাচ সেনারা। কিন্তু ভারী অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত সার্বদের কাছে ডাচ সেনারা নতিস্বীকার করে। এ কারণে সেদিনের নিরস্ত্র মানুষকে রক্ষা করতে না পারার জন্য ডাচদেরও ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত করা হয়।

বন্দি শিবির
সার্বদের হাতে বন্দি বসনীয় মুসলমান সৈনিক ও যুবকদের বিভিন্ন যায়গায় স্থাপিত বন্দি শিবিরে রেখে নির্যাতন করা হত। বন্দুকের নলের .........কাজ করতে বাধ্য করা হত। কনকনে শীতে হালকা কাপড় জড়িয়ে রাত্রি যাপন করতে দিতো। (একজন বন্দি রাতে মারা যায় কিন্তু তার সাথীকে সকালে মৃত্যুর খবর দেয়। রাত্রে তার কম্বল জড়িয়ে সে শীতের প্রকোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করে।)
গণহত্যা
বিহা এলাকার ক্লুচ নাকম স্থানে ৫ হাজার লোকের এক গণ কবর আবিস্কৃত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর প্রথম বছরেই ১,৩০,০০০ মুসলমানকে শহীদ করা হয়। ১৭০০০ শিশুসহ নিহত মুসলমানের সংখ্যা তিনলাখে পৌঁছেছে। সেব্রেনিৎসা ছিটমহলটি পতনের পর ৪০০০ মুসলমান সৈনিককে দিয়ে তারা কবর খুড়িয়ে পরে সবাইকে গুলি করে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। কমিউনিস্ট শাসনআমলে ৬০০০ মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ধর্মীয় আদালত এবং স্কুলসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ইসলামী পত্রিকাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। হাজার হাজার মুসলমানকে দেশান্তরিত করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণের নামে মুসলমানদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয় যাতে ঐক্যবদ্ধতা গড়ে উঠতে না পারে।

নারী নির্যাতন
নারী নির্যাতন যে কোন যুদ্ধের একটি স্বাভাবিক পার্শ্ব ফল হলেও বসনিয়ার মুসলমান নারীদের উপর এ বিষয়টি যেভাবে পরিচালিত হয়েছে তাতে মনে হয় এটি ছিল সু-সরিকল্পিত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিষয়। ২৭ শে জুন ১৯৯৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বসনিয়ার প্রধানমন্ত্রী তার দেশে প্রায় ১২০০০ মুসলমান নারী সার্বদের হাতে ধর্ষিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। মুসলমান বাচ্চা মেয়েদের পর্যন্ত যুদ্ধ ফ্রন্টে সার্বদের নিকট পৌছে দেয়া হত। শুধু সম্ভ্রমহানীর জন্য ১৭টি ক্যাম্পের খোঁজ পাওয়া যায়। ৫০,০০০ হাজার নারী গর্ভবতী হয়। মুসলমান নারীদের উপর এই নির্যাতন যে পরিকল্পিত তার প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিস্টান পোপ জন পল এর উক্তিতে: শ্লীলতাহানীতে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত না ঘটিয়ে সন্তানধারণের জন্য সে পরামর্শ দেয়। এবং শ্লীলতাহানীর কুকর্মটিকে স্নেহ ভালবাসায় রূপান্তরিত করার জন্য বলে। অর্থাৎ এই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমান নারীদের মাধ্যমে যারয সন্তানের জন্ম দেয়া যেন তারা প্রকৃত মুসলমান হয়ে কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। আবার গর্ভধারণে উৎসাহ দেয়ার জন্য কঠিন নির্যাতন চালাতো নারীদের উপর আর গর্ভবর্তী হয়ে গেলে শাস্তি মওকুফ করতো। পূর্ব বসনিয়ায় ২৫ হাজার মুসলিম বালিকা ও মহিলা গণ নির্যাতনের শিকার হন। বহু মহিলাকে বিজলুবাক, পোপরোজি, ফোকা বন্দি কেন্দ্রে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আটক রাখা হয়। ওখান থেকে সার্ব সৈন্য ও পুলিশ মহিলাদের বাছাই করে বাইরে নিয়ে যায় নির্যাতনের উদ্দেশ্যে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বহু বালিকা ও মহিলার মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী সার্ব-সৈন্যরা গণনির্যাতনের মাধ্যমে ৬০ হাজার মুসলিম মহিলার গর্ভে জন্ম দেয় খ্রিস্টান সন্তান। ===> LINK

No comments:

Post a Comment