অধ্যাপক গোলাম আযম বলেন,
১৯৫০ সালে এম,এ পরীক্ষার কয়েক মাস আগে তাবলীগ জামায়াতের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে পরীক্ষার পর তিন চিল্লায় বের হই।এ দেশে তাবলীগ জামায়াতের আমীর হযরত মাওলানা আব্দুল আযীযের সাথে চিল্লা দেবার সুযোগ পাওয়ায় এবং তাবলীগের চিল্লা উপলক্ষে হিন্দুস্তান গিয়ে অনেক যোগ্য আলেমের সোহবতে দ্বীনের পথে জীবন উৎসর্গ করার প্রেরণা পাই।সাড়ে চার বছর তাবলীগ জামায়াতে নিয়মিত কাজ করার যে তৌফিক আল্লাহ পাক দিয়েছেন তাতে আমার জীবনে এ জযবা পয়দা হয়েছে যে,দ্বীন ইসলামই মুসলিম জীবনের একমাত্র মিশন বা উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
১৯৫২ সালে তমদ্দুন মজলিসের মাথে সম্পর্ক হওয়ার ফলে ইসলামকে একটি বিপ্লবী আন্দোলন হিসেবে বুঝবার সুযোগ হয়।রাসূলূল্লাহ (সঃ)-এর জীবন যে শুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়,সমাজ,রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক জীবনেও রাসূল যে বিপ্লব সাধন করেছেন সেদিক থেকেও ইসলাম সম্পর্কে তখন পড়াশুনা শুরু করি।তমাদ্দুন মজলিসের মারফতেই সর্বপ্রথম আমি মাওলানা মওদূদী (রঃ)-এর কিছু বই বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় পড়ার সুযোগ পাই।
সেকালে লালবাগ শাহী মসজিদে তাবলীগ জামায়াতের মাসিক বড় ইজতিমা হতো। তাতে আমাকেও বক্তৃতা দিতে হতো। তাবলীগের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছয় উসূলের যে বক্তৃতা আমি করতাম তা শুনে হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রঃ)তার নিকটবর্তী লোকদের কাছে আমার সম্পর্কে মন্তব্য করতেন, “এ লোক তাবলীগ জামায়াতের কর্মসূচী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না” পরবর্তীকালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করার পর তার সাথে দেখা করতে গেলে সেখানে উপস্থিত অনেককে সাক্ষি রেখে বললেন, “আমি বলেছিলাম না যে,তাবলীগ জামায়াত একে আটকিয়ে রাখতে পারবে না?” তাঁর কথা শুনে আমি অনুভব করলাম যে,তাবলীগ জামায়াতের মঞ্চে বক্তৃতা কালেও তমদ্দুন মজলিসের ইসলামী বিপ্লবের সুর আমার কথায় হয়ত প্রকাশ পেতো। তাই তার মতো জ্ঞানী ব্যক্তি এ কথা আচ করতে পেরেছিলেন। জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দান করার ফলে তিনি আমাকে উৎসাহিত করায় আমি আরও নিশ্চিত হলাম।
১৯৬৮ সালে ইংরেজী ভাষায় আমার লেখা A Guide to Islamic Movement (ইসলামী আন্দোলনের দিশারী)নামক বই-এর ভূমিকায় আমি লিখেছিলাম , “আমার পিতা থেকে ইসলামকে একটি ধর্ম বলেই বুঝেছিলাম। হযরত মাওলানা থানভী (রঃ)-লেখা ও মাওলানা ফরিদপুরী (রঃ)-এর সোহবতে বুঝতে পারলাম যে,ইসলাম এক মহান মিশন এবং এর জন্য জীবন উৎসর্গ করাই ঈমানের দাবী। জামায়াতে ইসলামীতে এসে অনুধাবন করলাম যে, ইসলাম এমন এক বিপ্লবী আন্দোলন যার মাধ্যমে আল্লার জমীনে আল্লার বিধানকে কায়েম করার জন্য চেষ্টা করা মুমিনের জীবনে সবচেয়ে বড় ফরয। এখন আমি কৃজ্ঞতার সাথে স্বীকার করছি যে,হযরত থানবী, তাবলীগ জামায়াত,তমদ্দুন মজলীস ও জামায়াতে ইসলামী আমাকে ক্রমিক পর্যায়ে সত্যিকার মুসলিম হবার প্রেরনা যুগিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীতে এসে পূর্নাঙ্গ ইসলামের রূপ বিস্তারিতভাবে জানবার সুযোগ পেয়েছি।
-- অধ্যাপক গোলাম আযম (ইকামতে দ্বীন বই থেকে) LINK
No comments:
Post a Comment